বর্ণ-বিদ্বেষ

মেয়েদের গায়ের রং নিয়ে
পুরুষ সমাজের নোংরা বাছ-বিচার বিষয়ে
দারুণ একটি আবেগপ্রবণ আর্টিক্যাল
পত্রিকা অফিসে জমা দিয়ে, হুইস্কির আড্ডা শেষে,
বিশিষ্ট নারীবাদী লেখকটি তার
বউয়ের সাথে (যিনি শহরের সবচে' রূপসী
হিশেবে স্বীকৃত) ঘুমাতে গেলেন।
লেটনাইট সৌন্দর্যকথা অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা
শো-এর পাঁচ ঘন্টা আগে একটি দামী পার্লারে।
মুখে অনেক কিছু মেখে বসে আছেন তার শ্যামরঙ
দুধে আলতায় আড়াল করার জন্য।
যিনি প্রায়ই তার অনুষ্ঠানে দন্তবিকাশ ক'রে ব'লে থাকেন-
'আমি মনে করি সৌন্দর্য গায়ের রঙে নয়, মনে'।
এর মাঝে বিয়ের বাজারে কদর নেই ব'লে
কতো শ্যামরঙ মেয়ে নীরবে একা একা
কতো সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ফেলেছে তার হিশেব নেই।
তাদের ব্যবহৃত রং ফর্সাকারি ক্রিম, ফেসওয়াশ
তাদের শ্যামরং আড়াল করতে না পারলেও
হীনমন্যতাকে মূর্ত ক'রে যায় প্রতিনিয়ত।
কালো রঙের জন্য মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না ব'লে
কতো বাবার বিপি দু'শো ছাড়িয়েছে কেউ জানে না।
তাছাড়া আরও কতো পরিমাপৌর্ধ্ব চাপ!
মায়েরা একমনে এন্ডোবার ঈশ্বরকে ডেকেছেন যে,
ঈশ্বর কিছু করতে না পেরে
মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজছেন।
আর ওদিকে,
সেই আর্টিক্যাল ছাপা হবার পর তার বন্দনায়
পত্রিকা অফিসের ফোন একটানা ডেকে গেলো
বর্ষার ব্যাঙের মতো।
সেই নারীবাদী লেখকের ইনবক্স প্রশংসায় ভর্তি।
নারীসমাজের জন্য তার অবদানের স্তুতিতে
ভ'রে উঠলো রীমের পর রীম
কর্ণফুলীর হোয়াইটপ্রিন্ট!
ওই সৌন্দর্যকথা অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা
আরও দু'টি নতুন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার
প্রস্তাব পেয়েছেন। তার ফ্যানপেজে
নতুন ক'রে আরও পাঁচ হাজার 'লাইক'।
অথচ শ্যামরং মেয়েরা রঙ ফর্সাকারী ওইসব
ক্রিম, ফেসওয়াশ মেখেই চলেছে
বিজ্ঞাপনের আপাতঃ উজ্জ্বল মেকি আশ্বাসে।
বাবাদের বিপি উর্ধ্বগামী
মঙ্গলে যাত্রা করা রকেটের মতো।
মায়েরা প্রার্থনা করতে করতে মুখে ফেনা।
ঈশ্বর এখনও মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজছেন…!

জীবনানন্দের প্রতি


বিবর্ণ, ধূসর এখন কার্তিক-নবান্নের মাঠ,
কৃষকের কান্নায় ধুয়ে গেছে বালিতে আঁকা শ্লোক:
নির্জীব হয়ে গেছে বাসমতী চালে ধোয়া সাদ হাত,
আইলিনারে মেকি হয়ে গেছে 'পাখির নীড়ের মতো চোখ'।

লিখতে খুব ভয় হয়- 'দেখিয়াছি বাংলার মুখ'।
স্বপ্নেরা আত্যহত্যা করে। 'আবার আসিবো ফিরে'
বলতেই বুক এসে জমা হয় এক অজানা অসুখ।
সুরঞ্জনারা ধর্ষিতা হয়, ধর্ষক শেয়ালেরা হরিনাম করে।
খ্যাতির জন্য সতীত্ব বিকোয় বনলতা সেন,
আমরা রূপালী আলো দেখি না, চারিদিকে অনন্ত তিমির…
কবিত্ব চুকিয়ে দিতে চায় জীবনের সব লেনদেন,
আমরা রোজ কবর খুঁড়ি, আমাদের অনাগত পাণ্ডুলিপির।
তবু মাতাল যদি হতে হয়, কবিতার ছিপি খুলে
ছন্দ পান ক'রে আর সব ভুলে যাবো,
আমাদের এখানে ট্রামের প্রচলন নেই,
ধাবমান ট্রাকের নিচে রক্তাক্ত হয়ে কবিত্বের প্রতিদান দেবো।

বসন্ত ১৪২১

বিকট শব্দে প্রাণঘাতী ককটেল কিংবা
পেট্রোল বোমা নয়,
নীরবে একটি ফুল ফুটুক।
চোখ জ্বালা করা দাউ দাউ আগুনে মানুষ নয়,
বিবেকের উজ্জ্বল দহনে পুড়ে
ছাই হয়ে যাক ভেতরের হায়েনা।
বারুদ, গ্যাস, লাশের উৎকট গন্ধ নয়,
শিউলি চাঁপার সুগন্ধি বুননে হোক বাতাসের জামা।
স্বজন হারানো মানুষের সুতীব্র আর্তনাদ নয়,
গায়ক পাখির ধ্রুপদী চলুক ইথারের কনসার্টে।
ছোপ ছোপ কালো কালো রক্ত নয়,
রাজপথের কপালে থাক আশীর্বাদের তিলকের মতো আল্পনা।
অভিশপ্ত পঙ্গুত্বের ক্রাচ নয়,
মুঠো ভরে থাক পরম নির্ভরতার আরেকটি মুঠোয়।
বীভৎস ব্যান্ডেজ নয়,
কপালের ক্যানভাসে থাক প্রেয়সীর ঠোঁটে আঁকা
চোখ ধাঁধানো চিত্রকর্ম।
ও বাসন্তী, রং নিয়েছিস? মানচিত্রে রঙের খেলা হোক,
ও বাসন্তী, এ কি করছিস? শাড়ির খুঁটে মুছে নে দু'চোখ।
ও বসন্ত, একটু তাকাও, দ্যাখো রাস্তায় কত্তো লোক,
ও বসন্ত, একটা বর দাও, সবার স্বপ্ন সত্যি হোক।