কুমোরদুহিতা

আমি কুমোরের মেয়ে। চড়ুই পাখির ঠোঁটে ঘুমিয়ে ছিলাম,
এক দানা ঘুম পড়েছে রাস্তায়,
শকুন্তলা দেখেননি। আমাকে নতুন করে গড়তে চেয়ো না --
মা আমাকে নিজ হাতে তৈরি করেছেন,
আদি সৌন্দর্যের পোঁচ দিয়েছেন বাবা।
কুমোরের মেয়ে, পানাম নগরে মৃদঙ্গ ডমরু…

যে কোন মেয়েকেই আমি ভালবাসতে পারি

পৃথিবীতে
নোংরা
কোন মেয়ে
নেই

রাতের বুনো ঝোঁপ

শিশিরের পাতা থেকে তোমাকে তুলে নিয়েছি আমি, কুয়াশা উৎসব।
ভোর গড়িয়ে গেল, সেই নিরাভরণ সংকেতগুলো দাঁড়িয়ে
ব্যথার দরজায়। পাখিদের অগোচরে সরল কাঁঠালপাতায়
সে মগ্ন নিঃশঙ্ক প্রার্থনায় -- সে আমি না আমার আকাশতারা?
মাঝরাতের এ্যারোপ্লেন আবছা চাঁদের নিচে স্থির
ঝুলে রয়েছে অজানা বড়শিতে, নিচে ঘাসের তিনশো বছরের কুয়াশা।
হও তুমি রাতের বুনো ঝোঁপ, আমি পালাবো,
হয় তো জানো না কত ব্রহ্মবিদারক লেখা জড়িয়ে রয়েছে রাতের অতল জালে।

ধানক্ষেত

                               ছোট বউ লো বড় বউ লো
                                                     ঘাটে যাবি লো
                               পানির তলে ঘুঘু ডাকে
                                                     শুনতে পাবি লো।।

কাদা শুকোনোর পর
ধানক্ষেতে
তিনশো ফড়িং আর এক ঝাঁক রোদ কলহে মেতেছে।

এখন কতটা কাদা?
কে অন্ধ হয়েছে? কারা কারা?

ধানশীষে এত এত অপরাধ যে গাঁয়ের পথগুলো
এতে না করে না।
বীজগুলো বালিশের নিচে রেখে বুড়োরা ঘুমোয়।
অন্ধকারে কত কত সেতু
চিলোকোঠা।
কাদায় পা ডুবুডুবু,
ফড়িঙের চোখ আমাদের খুঁজতে নেমেছে
তৃতীয় চুল্লীতে।

নক্ষত্রদের পথে রেখে
হাঁসের হিংস্র ডানা
জড়িয়ে পড়বে
এশিয়ার ডুবোদ্বীপসমূহের কলহে।

আমার ভুল আমার জীবন

পরিষ্কার কাঁচের চসমা আমার টেবিলে পইড়া রইছে
কিন্তু চসমা তো চসমাই
ওইটা আছে ওইটার মতোই
আর আমি আছি আমার ভুলগুলারে নিয়া
আপ্নে চাইতেছেন এগুলারে আমার জীবন থিকা
যেন
ছুঁইড়া ফেলি আমি
ক্ষমা করবেন আমার ভুল আমার
এই ভুলগুলারে বাদ দিলে আমার আর কিই বা থাকে
আর আমি ভালোবাসছি এই ভুলগুলারেই
রাগ হইছি
বিরক্ত হইছি
আদর দিছি
আর আমি হাসপাতাল থিকা দূরে এভাবে
বাঁইচা আছি

চাঁদের জন্ম

চাঁদের নিজের আলো নেই
রোদ আর কুয়াশা একই ভার বহন করছে
আমরা ব্যাঙের পা
পূর্বপুরুষের আত্মানুসন্ধানের তন্তুজালে জড়িয়ে রয়েছি
আর প্রত্যেকেই যথার্থ পাহারাদার
মিহি ধুলোর মহাজগৎ
কাঁথা মুড়ি দিয়ে বুড়িটা রোদ পোহায়
চিনির লোভে
আমাদের পিঁপড়ে এতক্ষণ আমাদের ভেতরেই ছিল
আমাদের শীতের পশম
কারখানা
সরল রেখার ভিতর গড়ানো জলের ধারা
আকাশের গভীর নিশ্বাসে পেঁচা ডুবিয়ে দিল তিনটি পালক
চমৎকার আর জনপ্রিয় ইশটিশানগুলোর নাম ভুলে গিয়ে এখন আমাদের গিয়ে দাঁড়াতে হবে
আধমরা কালো পাথরটির সামনে
যে কি না জীবনের বেশিরভাগটা কাটিয়েছে জন্তুজানোয়ারের ভিতর
আর বুনো জোসনায় নিজের খুনখারাপির কথা জেনেছে
ধুলোয় জন্তুর শ্বাস
আলো নিভিয়ে দাও শীতের বকুল ফুলের বারান্দা
শীতট্রেনের শব্দ নেই
এতক্ষণে কুকুর আর নারী আগুনে গলে গিয়ে মিলিয়ে গেছে জলে
পুকুরের জলে সে শুয়ে রয়েছে প্রতিহিংসাপরায়ণতা ছাড়াই
আমার মুহূর্ত
আমারই দোষ
ব্যাঙ জানে না কোনটা তার আসল পা
খোসাগুলো দেহ থেকে ছাড়িয়ে
স্থির হও
সমুদ্র বয়ে চলেছে কুয়াশার ভিতর
শান্ত
সরল
হাঙর